
৳ ৫০০ ৳ ৪২৫
|
১৫% ছাড়
|
Quantity |
|
৯৯০ বা তার বেশি টাকার বই অর্ডারে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি। কুপন: FREEDELIVERY
প্রথম অর্ডারে অতিরিক্ত ১০০ টাকা ছাড়; ১০০০+ টাকার বই অর্ডারে। ৫০ টাকা ছাড়; ৫০০+ টাকার বই অর্ডারে। কুপন: FIRSTORDER
একাডেমিক বইয়ে ১০% পর্যন্ত ছাড়





গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের বই ‘হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সলিচুড’ প্রথম হাতে পেয়েছিলাম ১৯৭৪ সালে, লন্ডনের একটি অত্যন্ত সাধারণ দোকানে। বাড়িতে এনে বইটি উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে মনে হয়েছে আমি এক বিশাল অরণ্য, এক অচেনা-অজানা মহাদেশের খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছি। ম্যাজিক রিয়ালিজম বা জাদুবাস্তবতা সম্বন্ধে তখনো আমার ধারণা তেমন স্বচ্ছ ছিল না। আরব্য উপন্যাসের জাদুর কার্পেটের মতো রূপকথার বাইরে, এমন সিরিয়াস ঘটনা লেখায় কীভাবে বাস্তবতার সঙ্গে জাদুবাস্তবতার যোগ হয়, কোন কৌশলে এ জীবনঘনিষ্ঠ সাহিত্যের উপাদান হয় এবং মোটেই তা বেমানান লাগে না, বোঝার প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলাম। বারবার পড়তে পড়তে চলে যেতাম আবার প্রথম পাতায়, আসলে শুরু হয়েছে কোনখান থেকে এই দীর্ঘ কাহিনি, তা বুঝতে। এই বোঝা না বোঝার দোলাচলে চিত্ত জেনেছিলাম আমি দাঁড়িয়ে আছি এমন এক বিশাল মহৎ হিমালয়ের মতো পর্বতমালার পাদদেশে, না হলে এক বিশাল বনভ‚মির মুখোমুখি, যার স্বাদ আমার জীবনে নতুন। বলেছিলাম একেবারে স্বতঃসিদ্ধভাবে বইটি নোবেল প্রাইজ পাবে। কেন পাবে তার ব্যাখ্যা করতে বললে কথা হারিয়ে যাবে জানি কিন্তু সেদিন আমি যা বুঝেছিলাম, এগারো বছর পর ১৯৮২ সালে আমার সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হলো। ছয় জেনারেশনের লাতিন আমেরিকার পটভ‚মিকায় এই বিশাল গ্রন্থ যখন আমি অন্য বইয়ের ভিড়ে আর মনে করছি না, যখন মার্কেসকে আর বিভিন্ন লাইব্রেরিতে খুঁজে ফিরছি না, তখনই ঘটল সেই ঘটনা। শ্রেষ্ঠতম সাহিত্য পুরস্কারে ভ‚ষিত হলেন এই অনন্যসাধারণ সাহিত্যিক। নোবেল পেয়ে গেলেন। নোবেলের ইতিহাসে যে কয়েকজন যথার্থই এই পুরস্কারের উপযুক্ত, তার মধ্যে নিঃসন্দেহে মার্কেস একজন। আমার ভবিষ্যদ্বাণী সার্থক হলো। আমি আনন্দিত হলাম। বুঝলাম এই পৃথিবীর বিরাট গ্রন্থশালায় দেশ বা মহাদেশ, ভাষা বা পরিবেশ, পটভ‚মি বা অচেনা মানুষ কোনো বড় কথা নয়। আসলে আমাদের পরিচয় পৃথিবীর মানুষ। যে পৃথিবী চেনাজানা গ্রহের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও একক। আর এই সাহিত্যই আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয় একটি সুন্দর শামিয়ানার নিচে। আমি তখন আবার খুঁজে পেতে মার্কেসের বই বা গল্প পড়তে শুরু করলাম। শিউরে উঠলাম এরেন্দিনার গল্প পড়ে। তারপর একদিন জানলাম স্পানিশ ভাষা ‘কানডিডাকে’ কেউ বলে সরলা আবার কেউ বলে নির্দোষ। ‘ডাসালমাডা‘ নামের স্প্যানিশ শব্দকে কেউ বলে দুষ্টু আবার কেউ বলে ভয়ংকরী। আসলে ‘ডাসালমাডা’ শব্দের অর্থ হৃদয়হীন বা আত্মাহীন। এবং জানলাম বইটার পুরো নাম ‘সরল এরিন্দিরা এবং তার হৃদয়হীন দাদির একটি অবিশ্বাস্য বিষাদমাখা গল্প’। ইংরাজিতে ইনোসেন্ট বলাতে আমরা অনেকে নির্দোষ শব্দটি ব্যবহার করেছি। এবার স্প্যানিশ ভাষায় বইটির শিরোনাম লিখতে চাই ‘খধ রহপৎবনষব ু ঃৎরংঃব যরংঃড়ৎরধ ফব ষধ পধহফরফধ ঊৎরহফরৎধ ু ফব ংঁ ধনঁবষধ ফধংধষসধফধ’ এখানকার ‘কানডিডা’ শব্দের অর্থ সরল হতে পারে। নির্দোষও হতে পারে। তবে ‘ডাসালমাডা’ হৃদয়হীন বা ‘আত্মাহীন’। এমন কিছু মনে করে আমি এরিনডিরা অনুবাদে ভয়ংকরী শব্দটি ব্যবহার করি। ভয়ংকরী দাদিমা। দুষ্টু বললে তো আদরের মতো কোনো ডাক! তবে যিনি শব্দটি নির্বাচন করেন এই হয়তো পছন্দের নির্বাচিত শব্দ। আমার প্রিয় স্যার মুনীর চৌধুরী ‘টেমিং অফ দ্য শ্রæর’ অনুবাদে লিখেছিলেন ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ অপূর্ব! এ কারণেই কি আমরা বলে থাকি অনুবাদও সৃষ্টিশীল লেখা। অনুবাদে শব্দ নির্বাচন সবচেয়ে কঠিন কাজ বলে আমি মনে করি এবং অনুষঙ্গ। ‘বৃষ্টি পড়ছে’। কোথায়? ঢাকায় না লন্ডনে। আমরা খুব ভালো করে জানি দুই জায়গার বৃষ্টি একরকম নয়। এইসব নানা ভাবনা, নানা দোলচল মন, নিয়েই অনুবাদ হয়। মনে আছে উইলিয়াম র্যাডিচে আমাকে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথের ‘মরণ’ অনুবাদ তিনি ছয়বার ছয়ভাবে করেছেন, তার পরও সন্তষ্ট নন। ‘চন্দরা কহিল মরণ’! এইতো হয়। বিকাল, অভিমান এসব তো কখনো ঠিকমতো অনুবাদ হয় না। তার পরও অনুবাদ হয়। এবং আমরা বুঝতে পারি কী বলতে চান মূল লেখক। আতঙ্কিত হলাম ‘আমি তো কেবল টেলিফোন করতে এসেছি’ গল্পটি শেষ করে। মনে হলো এভাবে কেন শেষ হলো মারিয়ার গল্প? কেন মার্কেস পাঠকদের দাঁড় করিয়ে দিলেন এক দুর্মর কালডিসাকের সামনে? কেমন করে মারিয়া বেরিয়ে আসবে সেই ক্র‚র, নিষ্ঠুর, নির্দয়, ভয়ানক পাগলাগারদ থেকে। ভাবতে ভাবতে রাতই প্রায় শেষ হলো। অনুবাদ করলাম গল্পটি। ঢাকার ‘বাংলার বাণী’তে তা প্রকাশিত হলো। এরেন্দিরা অনুবাদ করে তা দিলাম প্রিয় রফিকুল ইসলাম স্যারের হাতে। উনি তখন ‘আজকের সভ্যতা’র সম্পাদকের কাজ করতেন। সেখানেই ছাপা হয় ‘নির্দোষ এরেন্দিরা এবং তার ভয়ংকরী দাদিমা’। পরে ‘সন্দেশ’ যখন ছাপান তিনি নির্দোষ না লিখে সরলা লেখেন। আর ভয়ংকরী বাদ দিয়ে দুষ্টু লেখেন। তবে সরলা শব্দটি ঠিক নয়। সরল হলে ভালো হতো। আর দুষ্টু তো হতেই পারে না কেন আগে বলেছি। আমি বুঝতে পারলাম একজন ভাষা জানলেই ভালো অনুবাদ করবেন সেটা ঠিক নয়। আর আমরা যারা ইংরাজি থেকে অনুবাদ করি তারা যে একেবারে আজেবাজে কাজ করে সেটাও ঠিক নয়। ধরা যাক অনুবাদ একধরনের লটারি। কারটা যে ভালো হবে কে জানে। ট্রাপিজের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া একজন, একটু হলেই পপাত ধরণিতল। তবে ভাষা জানার অনেক সুবিধা। যে জানে না তাকে হয়তো অনেক সময় অনুমান করতে হয়। তবে আমার বিশ্বাস, যিনি অনুবাদ করবেন তার মূল এবং অনুবাদের ভাষা দুটোই ভালো করে জানতে হবে এবং সৎ হয়ে পাঠকের কাছে থাকতে হবে। নোবেল প্রাইজ পাওয়ার ব্যাপারে তার খবর ছাপা হয়েছে। সংবাদপত্রে “ঞযব ঈড়ষড়সনরধহ ৎিরঃবৎ এধনৎরবষ এধৎপরধ গধৎয়ঁবু ধিং ধধিৎফবফ ঃযব ঘড়নবষ চৎরুব রহ খরঃবৎধঃঁৎব ভড়ৎ যরং হড়াবষং ধহফ ংযড়ৎঃ ংঃড়ৎরবং, রহ যিরপয ঃযব ভধহঃধংঃরপ ধহফ ঃযব ৎবধষরংঃরপ ধৎব পড়সনরহবফ রহ ধ ৎরপযষু পড়সঢ়ড়ংবফ ড়িৎফং ড়ভ রসধমরহধঃরড়হ, ৎবভষবপঃরহম ধ পড়হঃরহবহঃধষ’ং ষরভব ধহফ পড়হভষরপঃং.” পাবলো নেরুদা তার সম্বন্ধে বলেছিলেন, “ঢ়বৎযধঢ়ং ঃযব মৎবধঃবংঃ ৎবাবষধঃরড়হ রহ ঃযব ঝঢ়ধহরংয ষধহমঁধমব ংরহপব ঃযব উড়হ ছঁরীড়ঃব ড়ভ ঈবৎাধহঃবং.” যারা মার্কেস ভালোবাসেন তাদের কাছে এই সাহিত্যিকের দীর্ঘ পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। অনুবাদ করতে গিয়ে আমি যা দেখেছি সে এই গল্পের ভেতর সরাসরি কখন লেখক চলে আসেন। ‘চলুন পাঠক, দেখুন আনোয়ারা বেগমনের অন্দরমহলে কী হইতেছে’ ঠিক এইভাবে নয়, তিনি চলে আসেন তার নিজস্ব ভঙ্গিতে। যেমন এরেন্দিরা গল্পের মাঝখানে যখন এরেন্দিরা তার কষ্টের সর্বোচ্চ শিখরে, পায়ে শিকল বেঁধে যন্ত্রণায় হাত-পা ছেড়ে দিয়ে নিঃশব্দ, মার্কেস বলেন, ‘ঠিক এই সময়ই আমি তাদের কথা জানতে পারি। তাদের সেই জাঁকজমকের মুহূর্ত।’ তারপর লেখক আরো বলেন, চারণকবি রাফায়েল এসকালুনের গানের ভেতর যে এরেন্দিরার কথা আছে, তাকে তিনি নিজের চোখে দেখেছেন। আবার ‘আমি তো কেবল টেলিফোন করতে এসেছি’ গল্পটি লিখতে লিখতে মারিয়ার জাদুকর স্বামী সার্টানো প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘গল্পটি লিখতে লিখতে আমার মনে হলো বার্সেলোনাতে আমরা কখনো ওর আসল নাম জানতাম না।’ এবং এর পরেও আরো একটু সার্টানো প্রসঙ্গে। এভাবে লেখক চলে আসেন উত্তম পুরুষে। এ স্টাইল ভালো কি মন্দ বলা কঠিন। তবে এ তার নিজস্ব স্টাইল। যেমন এরেন্দিরার আভাস ছিল ‘শতবর্ষের নির্জনতা’র মধ্যে। তাকে নিয়ে পরে লিখেছেন দীর্ঘ গল্প, তেমনি সিনেটর ওনসিমো সানজমের নাম কেবল একবার উল্লেখিত হয়েছে এরেন্দিরার গল্পে। আর পরে একে নিয়ে একটি মোটামুটি বড় গল্প লিখেছেন। নাম দিয়েছেন “উবধঃয পড়হংঃধহঃ নবুড়হফ ষড়াব”. আমি যার অনুবাদ করেছি ‘ভালোবাসার ওপারে স্থির মৃত্যু’। এখানে ‘ভালোবাসা’ শব্দটি খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছেন মার্কেস। পাঠক পড়ে জানুন। এরপর আমি অনুবাদ করেছি ‘যে মেয়েটা কেবল ছ‘টায় আসে’। চমৎকার গল্প। এখানেও ভালোবাসা প্রচ্ছন্ন। ঠিক সেই ভালোবাসা যা আছে ‘ভালোবাসার ওপারে স্থির মৃত্যু’তে। ‘মিস ফর্বসের সুখের গ্রীষ্মকাল’ হাসিকান্না মেশানো গল্প। দুই ভাইয়ের কীর্তিকলাপে পাঠক হাসে, আর শিউরে ওঠে গল্পটির শেষে এসে। হয়তো লেখকের ছেলেবেলা আছে এই গল্পে। ‘পাখাওয়ালা দেবদূত’ বা ‘এ ভেরি ওল্ডম্যান উইথ এনোরমাস উইংগস’ পড়তে পড়তে মনে হলো এ গল্পটির আর একটি নাম হতে পারে ‘একদা মানুষের পৃথিবীতে এসেছিল এক পাখাওয়ালা দেবদূত’। মানুষের লোভ, যন্ত্রণা দেওয়ার ক্ষমতা, হীনম্মন্যতা সবকিছুই এখানে ভালো করে দেখানো হয়েছে। আমি তো পাখাওয়ালা বুড়োকে গরম লোহা দিয়ে ছেঁকা দেওয়ার ঘটনায় নিজেই চমকে গেছি। আঁতকে উঠেছি। গল্পটি ‘ম্যাজিক রিয়ালিজমের’ জারকরসে ভেজা অসাধারণ মার্কসীয় গল্প। ‘ডিয়ার মার্কেস মাই হ্যাট অফ টু ইউ’। শ্রদ্ধা প্রিয় লেখক। এই গল্পগুলো কেন বললাম তার কোনো বিশেষ কারণ নেই। এরেন্দিরার গল্পের পরে মনে হলো মারিয়া, সিনেটর সানচেজ, মারিয়া ডস এবং যে মেয়েটি ছ’টায় রেস্তোরাঁয় আসে তাদের গল্পগুলো অনুবাদ করলে মন্দ হয় না। কারণ এরা সকলেই যন্ত্রণার ভুবনে হাত ধরাধরি করে আছে। এমনকি পাখাওয়ালা দেবদূতও মানুষের পৃথিবীতে এসে কষ্ট পায়। সে বুঝতে পারে এসব তার পছন্দের নয়, এখানে থাকা মানে যন্ত্রণা। কেবল একটি শিশুর সঙ্গই সে ভালোভাবে মেনে নেয় এবং দুজনে মিলে চিকেন পক্সে পড়ে। ইচ্ছা থাকল আরো গল্প অনুবাদ করার। তার কলেরার সময়ে ভালোবাসার গল্প, এমনকি তার জীবনের গল্প, সবকিছু। সালেহা চৌধুরী লন্ডন সেপ্টেম্বর ২০২২
Title | : | মার্কেজ: ছয়টি গল্প |
Author | : | সালেহা চৌধুরী |
Publisher | : | ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্স |
ISBN | : | 9789848071601 |
Edition | : | 1st Published, 2023 |
Number of Pages | : | 128 |
Country | : | Bangladesh |
Language | : | Bengali |
If you found any incorrect information please report us